লাল তরমুজ সমাচার,

লাল তরমুজ সমাচার,

লাল তরমুজ সমাচার,

পহেলা বৈশাখের আগের দিন। আমি সস্ত্রীক বাড়ি ফিরছি। আগামী দিন থেকে লকডাউন। পহেলা বৈশাখ কিংবা চৈত্র সংক্রান্তিতে নাকি তরমুজ আবশ্যক। লাল তরমুজ। আমি বললাম, তরমুজ কিনতে পারবো না, সোহাগ কিনবে। না, হবে না। রাস্তার পাশে তরমুজের ভ্যান দেখে আমরা থামলাম। গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে ভ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে  আছি। তরমুজের দোকানদার নেই। কিছুক্ষণ পরে ৫/৬ ফিট দূরে দেখি উচ্চ বাচ্য, হাতাহাতি না হলেও ধাক্কাধাক্কি। আমি দূর থেকে বোঝার চেষ্টা করলাম। দোকানদার ওখানে মারামারিতে ব্যস্ত। মারামারির কারন হলো লাল তরমুজ। দোকানদার ক্রেতাকে কথা দিয়েছিলো,  তরমুজ লাল হবে। কিন্তু ক্রেতার প্রত্যাশা অনুযায়ী তরমুজটি লাল না হওয়ায়, এক কথা, দু কথা, এরপর মারামারি। রক্তারক্তির সম্ভাবনাও উড়িয়ে  দেয়া যায় না। লাল নিয়েই যেহেতু ঝগড়া। কেউ একজন হয়তো রক্ত দেখিয়ে  বলবে,  একে বলে লাল। তরমুজ এমন হতে হবে। 
আমি ফিরে এলাম।
পরদিন সকাল,
তরমুজের সংগে আবার দেখা। বাসার গেটের কাছাকাছি তরমুজের ভ্যান এসেছে। খবর পেয়ে ছুটে গেলাম। ভ্যানের আশেপাশে গোটা দশেক লোক। এরা কেউ তরমুজ কিনতে আসেনি। লকডাউনে এদের কর্মস্থল বন্ধ। তাই তরমুজের দোকান ঘিরে আছে সবাই। আলোচ্য বিষয়- তরমুজ কেমন লাল হবে? বৃষ্টি কিংবা খড়ার সাথে লালের সম্পর্ক....  আমি দূর থেকে দোকানদারকে বললাম,  একটা তরমুজ  দেন, যেটা লাল হবে না। আমার বাসা এখানেই। যদি তরমুজ লাল হয়,  তাহলে আমি টাকা ফেরত নেবো। 
দোকানদার সহ অকেজো লোকজন হাসতে শুরু করলো। আমি যে মন থেকেই কথাটা বলেছি এটা কেউ পাত্তাই দিলো না।
যাই হোক তরমুজ কিনে ভ্যানে রেখে একটু সামনে গেলাম। দোকানদারকে বললাম, যাবার পথে নিয়ে যাবো। ফেরার পথে দেখি, তরমুজের ভ্যানের চারদিকে ভীষণ ভিড়। লোক প্রায় ৩০ জন। সামনে যেতে চাচ্ছি না। একজন লোক দিয়ে  ইশারায় দোকানদারকে ডাকলাম। দোকানদার তরমুজ নিয়ে এলো। মুখ গোমড়া। আমি বললাম, এত ভিড় কেন?
এখানেও কাহিনী এক। দোকানদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বললো, আর তরমুজই বেচতাম না। এইরুম পাবলিক..
মানে হলো, একজন ক্রেতাকে দোকানদার লাল হবার চ্যালেঞ্জ দিয়ে তরমুজ কেটে দেখাল। তরমুজটি প্রত্যাশিত লাল হয়নি। তরমুজের লাল প্রক্রিয়ায় ৩০ জন মানুষ  উৎসাহ দেখিয়ে ঘেষাঘেষি করে করোনা সংক্রমণ ঘটালো। কেউ বলছে, তরমুজ এমনই লাল হয়। কেউ বলছে আপনে তাইলে পতেঙ্গার তরমুজ দেহেন নাই। ইত্যাদি...
এতক্ষণ ধৈর্য ধরে যারা এই বকবক পড়লেন, তাদের কাছে কি কখনো মনে হয়েছে, তরমুজ লাল হওয়া না হওয়ার  জন্য দোকানদার দায়ী নন। তরমুজ ভেতরে লাল না সাদা না গোলাপী সেটা জানার কথা সৃষ্টিকর্তার, আমরা কিভাবে নিজ দায়িত্বে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেই...
প্রকৃতি আমার তরমুজের রং যেমনি দেয়, সেটাতে আমরা সন্তুষ্ট নই কেন?
কস্টের পয়সায় তরমুজ কিনবো, সেটা লাল হতেই হবে  বলেই তো, অসাধু ব্যবসায়ীরা বিজ্ঞান প্রয়োগ করে, অথবা রং প্রবেশ করিয়ে, লাল তরমুজ বানাচ্ছে। আপনি খুশি হয়ে খাচ্ছেন আর ক্যান্সার রোগ নিয়ে চেন্নাই দৌড়াচ্ছেন। সন্তুষ্টি তো আপন মনে।
আসুন, প্রকৃতি যেমন উপহার আমাদের দেয়, তাতেই সন্তুষ্ট থাকি। লাল তরমুজ খাওয়ার ইচ্ছেটা বাদ দেই।

সংগৃহীত, 
রূপক রায়, সহকারী অধ্যাপক, চাঁদপুর সরকারী কলেজ।

পাঠকের মন্তব্য