হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তীকে উন্নয়নের মডেল বানাতে চাই -একান্ত সাক্ষাতকারে প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সেক্টরের অভুতপূর্ব উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত যে টিম দিবারাত্রী কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে তার অন্যতম নেপথ্য নায়ক বৃহত্তর কুমিল্লার কৃতি সন্তান প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ‘পাওয়ার সেল’এর মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন এর জন্ম হাজীগঞ্জ উপজেলার আহম্মদপুর গ্রামে ১৯৬৪ সালের ৩রা ডিসেম্বর। পিতা মরহুম নূরুল হক ভূইয়া ছিলেন বৃহত্তর গন্ধর্ব্যপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পারিবারিক ভাবেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বেড়ে উঠা মোহাম্মদ হোসাইন স্কুল জীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। দলের সকল কর্মসূচি তথা মিছিল মিটিংএ সক্রিয় অংশ নেন স্কুল ছাত্র মোহাম্মদ হোসাইন।
১৯৮০ সালে হাজীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তৎকালিন বৃহত্তর কুমিল্লা বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান সহ এসএসসি পাশ করেন। এর পর একাদশ শ্রেনিতে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। তিনি ছিলেন ঢাকা কলেজ সাউথ হোস্টেল ছাত্রলীগের আহ্বায়ক। এ সময় ছাত্রদল নেতা সানাউল হক নীরু বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হন।
১৯৮২ সালে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাশ করে বুয়েটে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন বুয়েট ছাত্রলীদের সহ-সভাপতি। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সকল কর্মসূচিতে সক্রিয় নেতৃত্বদানকারী এ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ১৯৮৮ সালে বুয়েট থেকে কৃতিত্বের সাথে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে উত্তীর্ণ হন।
এরপর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন ইনস্টিটিউট থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন। সততার পথিকৃত এ মেধাবী প্রকৌশলী ডেনমার্কের আলবার্গ বিশ^বিদ্যালয় থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করেন।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট ঢাকা কেন্দ্রের সাবেক সফল সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসেন বর্তমানে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়াও তিনি পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ক্লাবের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৮৮ সালে বুয়েট থেকে ইলেক্টিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর একটি বহুজাতিক কম্পিউটার কোম্পানীর হার্ডওয়ার প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ৯০-৯৬ পর্যন্ত ছিলেন সেনা কল্যাণ সংস্থায়। তিনি সেনা কল্যাণের গওঝবিভাগের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান। ৯৬ সালে যোগ দেন পাওয়ার সেলে। ২০১৩ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন পাওয়ার সেলের ডিজি হিসেবে। দীর্ঘ ৫ বৎসর এ পদে থেকে তিনি দক্ষতা ও সততার স্বাক্ষর রেখে সরকারের আস্থা ভাজন হয়েছেন। বিদ্যুৎ সেক্টরের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে ”পাওয়ার সেল” কঠোর পরিশ্রম করে যা্েচছ। পাওয়ার সেলের ডিজি হিসেবে তার ৫ম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসেইন এর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয় তাঁর দপ্তরে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সেক্টরের অভূতপূর্ব উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষুদ্র অংশিদার হতে পেরে আমি গর্বিত। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১০,০০০ মেগাওয়াট। নতুন করে বিদ্যুতায়ন হয়েছে লাখ লাখ কিলোমিটার এবং প্রায় ২ কোটি নতুন গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। এটা শেখ হাসিনার একটি বড় সাফল্য। শেখ হাসিনার সরকার আর এক মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে পারলে দেশে বিদ্যুৎ সেক্টরে কোন ন্যূনতম সমস্যাও থাকবেনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নেয়া মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন শেষ হলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল।
আওয়ামী পরিবারে জন্ম নেয়া বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বেড়ে উঠা প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন দীর্ঘ প্রায় ৩০ বৎসর যাবত বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জের জনগনের সেবা করে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের সংগঠন‘স্পন্দন’ বুয়েট ৮৮ ক্লাবের এর মাধ্যমে ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের বন্যার সময় হাজীগঞ্জ- শাহরাস্তী এলাকায় ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালান তিনি। মানুষের অনুরোধে তিনি বিগত বেশ কয়েক বৎসর যাবত এলাকায় নিয়মিত আসা যাওয়া করছেন এবং সামাজিক রাজনৈতিক সকল কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তীর মানুষের উন্নয়নে – সুখে দুঃখে তাদের পাশে থাকতে পারলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করব। সময় সুযোগ পেলেই আমি ছুটে যাই এলাকায়। বাকী জীবনটা আমি এলাকার মানুষের সেবা করে কাটাতে চাই।
তিনি বলেন. আমার এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মানুষ সচারচর খুঁজে পায়না বা তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারেনা। বিপদগ্রস্থ বা বঞ্চিত মানুষের একটা বড় অংশই আমার কাছে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসেন। আমি তাদের সঙ্গ দেই-কথা শুনি-ক্ষুদ্র সামর্থ্য দিয়ে পারলে সহযোগিতা করি-না পারলে স্বান্তনা দেই। আমার বাসা বাড়ী বা অফিস হাজীগঞ্জ- শাহরাস্তী এলাকার মানুষের জন্য উন্মুক্ত। যেহেতু আমার কাছে আসতে কোন প্রটোকল লাগে না তাই মানুষ আশা নিয়ে আমার কাছে আসেন। আমি তাদের সঙ্গ দেই-কথা শুনি-ক্ষুদ্র সামর্থ্য দিয়ে পারলে সহযোগিতা করি। এটাই আমার কাছে তাদের প্রত্যাশা।
তিনি বলেন, যেহেতু আমি বিদ্যুৎ সেক্টেরে কাজ করছি এবং পেশায় প্রকৌশলী তাই সবার আগে আমি আমার এলাকায় বিদ্যুতায়নে মনোযোগী হয়েছি। গত ৫ বছরে চাঁদপুর-৫ (জাতীয়: ১৬৪) সংসদীয় আসনে তথা হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি এলাকায় প্রায় ১ হাজার কি.মি. বিদ্যুত সংযোগ দিয়ে জনগণের সেবার মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা পালন করেছি। সরকারের অন্যান্য উন্নয়ন বিভাগে কর্মরত আমার প্রকৌশলী বন্ধুদের সহযোগিতায় অবকাঠামো খাতেও বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। নিজ উদ্যোগে এবং শুভানুধ্যায়ী- বন্ধুদের সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে সহযোগিতা করেছি। আমি আমার ক্ষুদ্র সমর্থ্য দিয়ে, ভালো ব্যবহার দিয়ে জন মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করছি। এ আচরণ শিখিয়েছেন আমাদের মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, আমি জনপ্রিতিধি নই-বড় মাপের কেই নই- একজন নগন্য ব্যক্তি। আমাকে আমার এলাকার কেউ “স্যার’ ডাকতে হয়না। তারা আমাকে“ভাই’বলেন- পরিবারের সদস্য মনে করেন। আমি আমার ক্ষুদ্র সামর্থ্য দিয়ে তাদের সঙ্গ দেই। পারলে বিপদে কাছে থাকি – সহযোগিতা করি। যে কেউ ফোন করলে আমি বিরক্ত হইনা।
তিনি বলেন- যেহেতু মানুষের জন্য রাজনীতি করি সেহেতু এলাকার মানুষ চাইলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইতে পারি। দেশের উন্নয়নের রূপকার আমাদের শেষ ভারসাস্থল প্রিয় নেত্রী মনোনয়ন দিলে আমি ইনশআল্লাহ বিপুল ভোটে এ আসন নেত্রীকে উপহার দিতে পারবো।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি আল্লাহ পাক আমাকে সুযোগ দেন তাহলে আমি হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিকে মনের মতো সাজাতে চাই। এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন হাজীগঞ্জ-একটি ব্যস্ততম বাজার। হাইওয়ের উপর ব্যাপক জানজটের কারণে বাজারের ব্যবসায়ীরা মারাত¦ক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমার কখনো বৃহত আঙ্গিকে কাজের সুযোগ হলে আমি এখানে একটি বাইপাস করবো জরুরী ভিত্তিতে।
আমাদের এলাকা যোগাযোগ ব্যবস্থা যুগপোযোগী নয়। চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কটি ৪ লেন করা সময়ের দাবী। আল্লাহ আমাকে সুযোগ দিলে আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিকে এটাকে ৪ লেনে উন্নীত করার উদ্যোগের পাশাপাশি গৌরীপুর থেকে কচুয়া-হাজীগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর সড়কটি চলাচল উপযোগী করার উদ্যোগ নেব যাতে অত্র এলাকার সবাই কম সময়ে-কম কষ্টে ঢাকার সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
শিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন বহু যুগ আগে থেকেই বৃহত্তর কুমিল্লা তথা চাঁদপুর অঞ্চল দেশের শিক্ষা-সরকারী চাকুরীতে নেতৃত্ব দিত। কিন্তু এখন সে অবস্থা নেই। চাঁদপুর জেলায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খুব প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ আমি হাজীগঞ্জ এলাকায় করতে উদ্যোগী হব।
ডাকাতিয়া নদী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক সময় এ নদীর কারণে হাজীগঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হয়েছিল। আজ নদীটি খননের অভাবে প্রায় মরা-নৌপথে চলাচলে অনুপযোগী। আমার সুযোগ যদি আল্লাহ দেন আমি এ নদীকে পরিকল্পনা মোতাবেক ভালোভাবে ড্রেজিং করে নৌপথ আবার চালু করব যাতে শুধু হাজীগঞ্জের ব্যবসা প্রসার নয়-নদীর দু পাশ ঘেঁষে মাঝারী ও ক্ষুদ্র মাপের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে। এর ফলে এলাকার হাজার হাজার শিক্ষিত বেকারের কর্মসংস্থান হবে। তিনি বলেন, ডাকাতিয়া নদীকে কেন্দ্র করেই এখানে ইকোনমিক জোনগড়ে উঠতে পারে। প্রয়োজন শুধু একজন দক্ষ ও জনদরদী উদ্যোক্তা যিনি-হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তীর মানুষের মনের দুঃখ অনুধাবন করতে পারেন।
ব্যক্তিগত জীবনে প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন দুই সন্তানের গর্বিত পিতা। বড় ছেলে মাহির আল হোসাইন পেশায় প্রকৌশলী এবং ছোট ছেলে নাভিদ আল হোসাইন ছাত্র। তাঁর সহধর্মিনী সুরাইয়া হোসাইন একজন উচ্চ পদস্থ ব্যাংকার। পেশাগত কারণে তিনি এশিয়া ,ইউরোপ , আমেরিকা ও অষ্ট্রেলিয়া অঞ্চলের ৪০টির বেশী দেশ ভ্রমন করেন।
পাঠকের মন্তব্য